শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন ড. ইউনূস ধান ক্ষেত থেকে অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার জমি নিয়ে বিরোধ; দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত দোকান বাকীর টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ : বৃদ্ধ নিহত হবিগঞ্জে হত্যা মামলা, আ.লীগ সভাপতিসহ ২শ জন আসামি গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে শামীম ওসমান লুকিয়ে থাকার গুঞ্জন, তাল্লাশি শেষে যা বলছে পুলিশ নগদ দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না এ সপ্তাহে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সারাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর গণভবনের মাছ-হাঁসও নিয়ে গেল জনতা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন, ছাড়লেন দেশ

৪৫ মিনিটে করোনা পরীক্ষার ফলাফল

তরফ নিউজ ডেস্ক: করোনা পরীক্ষায় সীমিত সংখ্যক আরটি-পিসিআর মেশিনে চাপ সামলাতে না পেরে পরীক্ষা সুবিধা বাড়ানোর জন্য যক্ষ্মা নির্ণয়ের মেশিন ‘জিনএক্সপার্ট’ ব্যবহার শুরু করছে সরকার।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফান্ড ১০ হাজার কিট সরবরাহের পর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইডিসিএইচ) ২৪ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু হয়।

কর্মকর্তারা জানান, জিনএক্সপার্ট একটি পোর্টেবল মেশিন। এর মাধ্যমে পরীক্ষা সহজ এবং সময় লাগে কম। এই মেশিনের মাধ্যমে ফলাফল পেতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়। নমুনা হিসেবে একজন ব্যক্তির লালা একটি কাঠির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় এবং কাঠিটি পরীক্ষার জন্য মেশিনের কার্তুজে রাখা হয়।

কোভিড-১৯ পরীক্ষায় গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচিত হয় আরটি-পিসিআর পরীক্ষা। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফলাফল পেতে প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়।

মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে জিনএক্সপার্ট পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ২৭০টি জিনএক্সপার্ট মেশিন রয়েছে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় করোনা পরীক্ষার সংখ্যা যখন অপ্রতুল তখন আরটি-পিসিআর পদ্ধতির সঙ্গে জিনএক্সপার্ট পরীক্ষা যুক্ত হচ্ছে। পরীক্ষার হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ সবচেয়ে নীচে রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পর্যন্ত দেশে প্রতি ২৫০ জনের মধ্যে একজনের পরীক্ষা করা হয়েছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশের প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে চার হাজার ৪৫২ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। যেখানে ভারতে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে পাঁচ হাজার ৯৬৩ জন, পাকিস্তানে পাঁচ হাজার ৬১১ জন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯৬ হাজার ৬৪৮ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ৬৬টি ল্যাবে এখন দিনে গড়ে প্রায় ১৮ হাজার পরীক্ষা করা হচ্ছে। এত কম পরীক্ষা সক্ষমতার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এমন উদাহরণও রয়েছে যে পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে সাত দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।

জিনএক্সপার্ট সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পোর্টেবল এই মেশিনগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার পাশাপাশি সেখানকার জরুরি রোগীদের জন্য বেশ কার্যকর হতে পারে।

তারা বলেছেন যে জিনএক্সপার্ট পরীক্ষাও একটি রিয়েল টাইম পিসিআর পরীক্ষা। তবে এর জন্য রিএজেন্টের প্রয়োজন হয় না।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে জিনএক্সপার্ট ব্যবহার করে সারাদেশে ২৫ লাখের বেশি টিবি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সবগুলো মেশিনই কার্যকর।

টিবি-লেপের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘জিনএক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য গ্লোবাল ফান্ড সহায়তা দিচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে ১০ হাজার কিট পেয়েছি এবং আরও ৩০ হাজার কিট চেয়েছি। আমরা আরও ৭০ হাজার কিট চাইব। এছাড়াও সরকার জিনএক্সপার্ট পরীক্ষা কিট কেনার বিষয়টি বিবেচনা করছে।’

অধ্যাপক সামিউল জানান, সরকার যদি সারা দেশে এটি সরবরাহ করতে চায় তাহলে পর্যায়ক্রমে প্রথমে ১০টি হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে ৪০টি হাসপাতালে এই সেবা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সম্পূর্ণ সক্ষমতা হিসাবে, প্রতিদিন এর মাধ্যমে পাঁচ হাজারের বেশি পরীক্ষা করা সম্ভব জানিয়ে অধ্যাপক সামিউল বলেন, ‘এটি দ্রুত, নির্ভুল এবং কম ব্যয়বহুল।’

‘এই পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা সহজেই হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে কারো করোনা আছে কিনা তা শনাক্ত করতে পারব। জরুরি অবস্থায় রোগীর করোনা আছে কিনা তা জানতে এই পরীক্ষা খুবই কার্যকর।’

একটি জিনএক্সপার্ট কিটের দাম প্রায় ২৪ ডলার বা প্রায় দুই হাজার ৪৫ টাকা। যেখানে রিএজেন্ট ছাড়াই একটি পিসিআর টেস্ট কিটের দাম প্রায় ৩০ ডলার বা প্রায় দুই হাজার ৫৫০ টাকা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর এই উদ্যোগের প্রশংসা করে জানান, এর মাধ্যমে আরও বেশি মানুষ পরীক্ষার আওতায় আসবে।

‘দুর্গম অঞ্চলে জরুরি রোগীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এটি একটি দুর্দান্ত মেশিন। যদি আমরা পর্যাপ্ত কিটের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারি তাহলে পরীক্ষা এবং ফলাফলের জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করার ভোগান্তি কমাতে এটি কাজে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, আমেরিকা, ভারত এবং আরও কিছু দেশ ইতোমধ্যে পরীক্ষার জন্য মেশিনটি ব্যবহার করছে।

বিএসএমএমইউয়ের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হাসান বলেন, ‘জিনএক্সপার্ট বহনযোগ্য হওয়ায় এটি সহজলভ্য। এটি যেসব প্রাথমিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা সংগ্রহ কম এবং যে জায়গাগুলোতে অনেক বেশি পরীক্ষা করতে হচ্ছে সেখানে খুবই সহায়ক হবে।’

একটি জিনএক্সপার্ট মেশিন একবারে চার থেকে আটটি নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম বলে তিনি যোগ করেন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজিস্ট এবং সহকারী অধ্যাপক জাহিদুর রহমান বলেন, ‘এটি একটি ভালো উদ্যোগ এবং উপজেলা পর্যায়ে এটি অনেক বেশি সহায়ক হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মেশিনগুলো পরিচালনা করা এত সহজ যে এর জন্য কোনো অতিরিক্ত জনবলও প্রয়োজন হয় না।’

যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা ছোট পরিসরে পরীক্ষা শুরু করেছি। কিট হাতে পেলে সারা দেশে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com